বায়োটেকনোলজি বনাম বাস্তবতা: বাংলাদেশে অগ্রগতি, সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ

বায়োটেকনোলজি বনাম বাস্তবতা🧬: বাংলাদেশে অগ্রগতি, সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ

🛑বাংলাদেশে বায়োটেকনোলজি এবং জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং  বিজ্ঞান ও  প্রযুক্তির অন্যতম সমৃদ্ধ ক্ষেত্র  যা দেশের কৃষি, শিল্প ও স্বাস্থ্যখাতে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।মূলত বাংলাদেশে জৈবপ্রযুক্তি গবেষণা শুরু হয় ১৯৭০-এর দশকের শেষের দিকে। এই গবেষণার মূল কারণ ছিল কৃষিক্ষেত্রের গুরুত্ব, যা প্রাচীনকাল থেকেই জাতীয় অর্থনীতির মেরুদণ্ড ছিল। সর্বপ্রথম পাটের  উপর টিস্যু কালচারের মাধ্যমে গবেষণা শুরু করে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। পরবর্তী  ১০-১২ বছরের মধ্যে, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে,গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনে জৈবপ্রযুক্তি ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদে অনুরূপ গবেষণা কার্যক্রম শুরু হয় । ১৯৯০ সালে , বাংলাদেশ উদ্ভিদ টিস্যু সংস্কৃতি সমিতি ( BAPTC ) গঠিত হয়। ১৯৯০-এর দশকের শেষের দিকে, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি সেন্টার (ICGEB) এর সদস্য হয়।  জৈবপ্রযুক্তি শিক্ষার উৎকর্ষ কেন্দ্র হিসেবে  গবেষণার পাশাপাশি সরকারকে সহায়তা ও পরামর্শ প্রদানের লক্ষ্যে ১৯৯৯ সালে সাভারে গনকবাড়িতে  প্রতিষ্ঠিত হয়   ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজি। 

🛑বায়োকেমিস্ট্রি ও মলিকুলার বায়োলজি দৃষ্টিকোণ থেকে🧬 

বাংলাদেশের বায়োটেকনোলজি গবেষণার মূল ভিত্তি হলো বায়োকেমিস্ট্রি ও মলিকুলার বায়োলজি। জৈবঅণু ও কোষের ক্রিয়াশীলতা বোঝা ও নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন সম্ভব হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, জিনোম সিকোয়েন্সিং এবং জিন সম্পাদনার ক্ষেত্রে মলিকুলার বায়োলজির কৌশল যেমন PCR (পলিমারেজ চেইন রিয়াকশন), জিন ক্লোনিং, ও CRISPR-Cas9 ব্যবহৃত হচ্ছে। বায়োকেমিস্ট্রি থেকে পাওয়া তথ্য ফসলের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো, কীটনাশক কমানো এবং উচ্চফলনশীল ফসল তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এই দুই শাখার সমন্বয়ে বাংলাদেশে আধুনিক বায়োটেকনোলজি গবেষণা আরও গতিশীল এবং ফলপ্রসূ হচ্ছে। 

🛑গবেষণার সাম্প্রতিক অগ্রগতি ও ভবিষৎ সম্ভাবনা

 জৈবপ্রযুক্তি শিল্প এখনও জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারেনি , তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, কিছু চলমান গবেষণার  ফলাফল এই খাতের যথেষ্ট সম্ভাবনা দেখায়। বেশ কয়েকটি বেসরকারি ওষুধ কোম্পানি পৃথক এবং নিবেদিতপ্রাণ বায়োটেক ইউনিট তৈরি শুরু করেছে। ব্র্যাক বায়োটেকনোলজি সেন্টার, স্কয়ার এগ্রিক-টেক এবং আমান অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজের মতো কিছু বেসরকারি সংস্থা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ভাইরাস-মুক্ত আলুর বীজ উৎপাদন করছে, ধীরে ধীরে আমদানি করা আলুর বীজের উপর নির্ভরতা কমিয়ে আনছে। প্রশিকা টিস্যু কালচার সেন্টার এখন টিস্যু কালচার থেকে প্রাপ্ত অর্কিড গাছের বিভিন্ন প্রকার রপ্তানি করছে। ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের মতো ওষুধ কোম্পানিগুলি ইনসুলিন উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ শুরু করেছে এবং বিদেশে রপ্তানির প্রস্তুতি নিচ্ছে।  এছাড়াও 

১. BT বেগুন: জিএম ফসলের সফল প্রয়োগ 

বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে Bt বেগুন (জিনগতভাবে পরিবর্তিত বেগুন) বাণিজ্যিকভাবে চাষ শুরু করে। ২০০৫ সালে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (BARI) ও কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ গবেষণায় এই ফসলের উন্নয়ন হয়। ২০১৪ সালে এটি চাষের অনুমোদন পায়, এবং ২০১৭ সালে ৩৬টি জেলায় প্রায় ৭,৫০০ কৃষক এটি চাষ করেন। Bt বেগুন চাষে কীটনাশক ব্যবহারে ৬০% পর্যন্ত হ্রাস এবং কৃষকের আয় বৃদ্ধি পেয়েছে । 

২. জিনোম সিকোয়েন্সিং ও মলিকুলার গবেষণা 

পাটের জিনোম: ২০১০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষকরা পাটের জিনোম সিকোয়েন্সিং সম্পন্ন করেন, যা পাট শিল্পে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করে । 

ইলিশ মাছের জিনোম: ২০১৮ সালে অধ্যাপক হাসিনা খান ও তার দল ইলিশ মাছের জিনোম সিকোয়েন্সিং সম্পন্ন করেন, যা মৎস্য গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে । 

SARS-CoV-2 ভাইরাস: ২০২০ সালে ডা. সেঁজুতি সাহা ও তার দল বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো কোভিড-১৯ ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্সিং সম্পন্ন করেন, যা মহামারী মোকাবিলায় সহায়ক হয় । 

৩. উদ্ভাবনী গবেষণা ও পণ্য উন্নয়ন 

জৈব পলিব্যাগ (সোনালি ব্যাগ): বিজ্ঞানী মোবারক আহমদ খান পাট থেকে তৈরি পরিবেশবান্ধব পলিব্যাগ উদ্ভাবন করেছেন, যা প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে । 

জৈব সার ও বায়োফার্টিলাইজার: বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানে জৈব সার ও বায়োফার্টিলাইজার উন্নয়নে কাজ চলছে, যা টেকসই কৃষি ব্যবস্থায় সহায়ক হবে। 

🛑ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা 

১. জিন সম্পাদনা প্রযুক্তি (CRISPR) 

বাংলাদেশে CRISPR প্রযুক্তি ব্যবহার করে উচ্চফলনশীল ও রোগপ্রতিরোধী ফসল উন্নয়নের গবেষণা চলছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রযুক্তির প্রয়োগ কৃষি উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে । 

২. বায়োটেক উদ্যোক্তা ও স্টার্টআপ 

বাংলাদেশে বায়োটেকনোলজি ভিত্তিক স্টার্টআপের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় নতুন পণ্য ও প্রযুক্তি উন্নয়নে কাজ চলছে, যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখবে। 

৩. আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও বিনিয়োগ 

বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও দাতা সংস্থার সঙ্গে সহযোগিতা বৃদ্ধি করছে। এই সহযোগিতা প্রযুক্তি স্থানান্তর, প্রশিক্ষণ ও গবেষণা অবকাঠামো উন্নয়নে সহায়ক হবে । 

🛑চ্যালেঞ্জ ও করণীয় 

গবেষণা অবকাঠামোর উন্নয়ন: আধুনিক গবেষণা সরঞ্জাম ও ল্যাবরেটরি সুবিধা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। 

মানবসম্পদ উন্নয়ন: বায়োটেকনোলজি বিষয়ে প্রশিক্ষিত জনবল তৈরি ও দক্ষতা উন্নয়ন জরুরি। 

নীতিমালা ও নিয়ন্ত্রক কাঠামো: জিএম ফসল ও বায়োটেক পণ্যের নিরাপত্তা ও অনুমোদন প্রক্রিয়া সহজীকরণ প্রয়োজন।  

🛑 শেষ কথা 

বাংলাদেশে বায়োটেকনোলজি গবেষণায় সাম্প্রতিক অগ্রগতি যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক। কৃষি, স্বাস্থ্য এবং শিল্প খাতে এর কার্যকর ব্যবহার কেবল দেশের অর্থনৈতিক বিকাশেই নয়, বরং একটি টেকসই ভবিষ্যৎ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা, দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ এবং আন্তর্জাতিক  সহযোগিতা অর্জন করতে পারলে বাংলাদেশ বায়োটেকনোলজি খাতে দক্ষিণ এশিয়ার অগ্রণী দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে সক্ষম হবে…. 

“গবেষণা হলো সত্যের সন্ধানে চলা পথ, যেখানে প্রতিটি প্রশ্ন এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে।”তাই নতুন দিগন্তের সাক্ষী হতে আমাদের গবেষণার যাত্রা শুরু হোক IRC(Innovative Research Center) এর সাথেই💫 

Table of Contents

Explore by Topics

Research Tips

Practical strategies to enhance your research efficiency

Career & Higher Studies

Insights Latest advancements and tutorials in Bioinformatics

Drug Design

Explore innovations in molecular docking and drug discovery

News & Events

Guidance on scholarships, SOPs, CV writing, and professor communication

Bioinformatics

Practical strategies to enhance your research efficiency

Want to Stay Updated?

Subscribe to our Newsletter and never miss out...

Company Information

Registered Company Name:

Innovative Research Center

Trade License Number:

TRAD/DNCC/047184/2024

TIN Number:

380164652827